রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দৈহিক গড়ন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহের গড়ন ছিল মধ্যম আকৃতির, না অতি লম্বা ছিলেন আর না (অতি) বেঁটে ছিলেন। বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির, (না অতি লম্বা ছিলেন আর না (অতি) বেঁটে ছিলেন, প্রায় দীর্ঘকায়), আমি তাঁকে লাল পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছিলাম, তাঁর চেয়ে সুন্দর কিছু আমি কখনো দেখি নি। (বুখারী ও মুসলিম)।

বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বর্ণনা মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের “উভয় কাঁধের দুরত্ব ছিল বেশি”, (চওড়া কাঁধ)। (সহীহ মুসলিম)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বুক মুবারকের পশম

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বুক হতে নাভি পর্যন্ত পশমের একটি সরু রেখা প্রলম্বিত ছিল। (মুসনাদে আহমাদ)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পিঠ মুবারক ও মোহরে নবুওয়াত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠ মুবারক ছিল “স্বচ্ছ রৌপ্যের মত”, (মুসনাদে আহমাদ)।

তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গায় মোহরে নবুওয়াত ছিল, যা দেখতে কবুতরের ডিমের মত গোলাকার। (সহীহ বুখারী)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাত ও পা মুবারক

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই হাত ছিল মাংসল ও পরিপুষ্ট, তাঁর পরে আমি তাঁর মত অপর কাউকে (এত অধিক সুন্দর) দেখিনি। (সহীহ বুখারী)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর “হাতের তালু ছিল নরম ও মসৃন”।  অন্য বর্ণনায় আসছে, “তাঁর দুই পা ও হাতের কব্জীসমূহ মাংসল এবং খাটো মতো  ছিল”, যা পুরুষের ক্ষেত্রে প্রসংশনীয় মনে করা হয় দৃঢ় পদক্ষেপ ও শক্ত পাকড়াও এর জন্য। নবীজীর পায়ের “গোড়ালি ছিল অমাংসল” বা হাল্কা মাংসল। (মুসনাদে আহমাদ)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শারীরিক শক্তি

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁকে   অন্যদের চেয়ে বেশি শক্তি দেওয়া হয়েছিল, বিশেষ করে যুদ্ধের ময়দানে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যুদ্ধ যখন তীব্র হয়ে উঠত এবং উভয় পক্ষ লড়াইয়ে লিপ্ত হত, আমরা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আড়ালে নিজেদেরকে বাঁচাবার চেষ্টা করতাম। ফলে তিনি ছাড়া আমাদের মধ্যে কেউ শত্রুর অধিক নিকটবর্তী থাকত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাকেম)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ঘ্রাণ মুবারক।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শরীর মুবারক অত্যন্ত সুরভিপূর্ণ ছিল। তিনি কোনো পথ অতিক্রম করার পর অন্য কোনো ব্যক্তি যদি ওই পথ অতিক্রম করত তাহলে তাঁর সুঘ্রাণের কারণে সে বুঝতে পারত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পথ দিয়ে অতিক্রম করেছেন। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ আমি এমন কোন মোলায়েম কাপড় বা রেশম স্পর্শ করিনি যা তাঁর (মুবারক) হাতের তালুর মতো কোমল এবং এমন কোন সুগন্ধির ঘ্রাণ আমি পাইনি যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অধিক সুরভিপূর্ণ (বুখারী ও মুসলিম)।

হাদিসের বর্ণনায় এসেছে যে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এক বালতি পানি আনা হল, তিনি তা থেকে পানি পান করলেন এরপর বালতিতে কুলি করলেন, এরপর ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করা হলো। অথবা (বর্ণনাকারী দ্বিধান্বিত ঠিক কোনটি) বালতি থেকে পান করলেন এরপর কূপে কুলি করলেন, তখন কূপ থেকে মিশকের মতো সুঘ্রাণ আসতে লাগলো। (মুসনাদে আহমাদ)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ঘামের সুগন্ধ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারকে ঘর্ম নিঃসরণ মুক্তোর দানা সদৃশ লাগতো, তাঁর ঘর্মরাজী ছিল মিসকের চেয়ে অধিক সুবাসিত। সহীহ হাদীসে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেনঃ এক গরমের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের গৃহে আসলেন এবং (দুপুর বেলা) বিশ্রামের উদ্দেশ্যে একটু কাত হলেন, এবং ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি প্রচুর ঘামছিলেন। এতদঃদৃশ্যে উম্মে সুলাইম (রাযি.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু ঘাম নিয়ে শিশিতে সংরক্ষণ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে বললেন, হে উম্মে সুলাইম! কী করছ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনার ঘাম সংরক্ষণ করে রাখছি, কেননা, তা মিসকের চেয়ে অধিক সুবাসিত। (সহীহ মুসলিম)।

আপনি কি মনে করেন একমাত্র দৈহিক সৌন্দর্যই নেতৃত্ব ও মানুষের মন জয়ের জন্য যথেষ্ট? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাতের আলোকে আপনার মতামত ব্যাখ্যা করুন।