রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নামায-সালাত

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নামায-সালাত

নামাযকে করা হয়েছে আমার চক্ষু শীতলকারী

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাযের বর্ণনা দেন, তিনি বলেনঃ আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নামায আদায় করলাম। তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন এবং একশত আয়াত পড়লেন। তিনি রুকু না করে সামনে চললেন। আমি ভাবলাম তা তিনি দু’রাকআতে শেষ করবেন ও তারপর তিনি রুকু করবেন। তিনি চলতে থাকলেন, এমন কি সূরা নিসা শেষ করলেন। অতঃপর সূরা আলে ইমরান। তারপর তিনি রুকু করলেন তার কিয়ামের কাছাকাছি সময় নিয়ে। তিনি রুকুতে বলছিলেনঃسُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম, সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম, সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম), পরে তিনি তাঁর মাথা ওঠালেন এবং বললেনঃ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا ولَكَ الْحَمْدُ (সামি’য়াল্লাহু লিমান হামিদাহ রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ), এরপর কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর সিজদা করলেন এবং সিজদা লম্বা করলেন। আর সিজদায় বলছিলেনঃ سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা, সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা, সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা), তিনি আল্লাহর ভয় অথবা তাযীমের-আয়াতে পৌছলেই তাঁকে স্মরণ করতেন। (বায়হাকী)।

অন্য হাদীসে এসেছে যেঃ তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন, সূরা বাকারা পাঠকালে যখন রহমতের আয়াতে পৌঁছেন, তখন তিনি তথায় থেমে রহমত কামনা করেন এবং যখন কোন আযাবের আয়াতে পৌঁছেন, তখন তিনি তথায় থেমে আযাব হতে মাগফিরাত কামনা করতেন। অতঃপর তিনি কিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকুতে অতিবাহিত করেন (মুসনাদে আহমাদ)।

এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামায ও আল্লাহর সমীপে দন্ডায়মান হওয়ার প্রতি ভালোবাসার কিঞ্চিৎ  প্রমাণ পাওয়া যায়...,  বস্তুত তিনি যখন একা নামায পড়তেন তখন অনেক লম্বা সময় নিয়ে নামায আদায় করতেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতেন নামাযে মশগুল হয়ে যেতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘক্ষণ নামায আদায় করা সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রির একাংশে (নামাযে) এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফাটার উপক্রম হয়ে পড়ত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এত কষ্ট সহ্য করছেন কেন? অথচ আপনার তো পূর্ব ও পরের গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বললেন, “আমি কি শুকরগুযার বান্দা হব না?”। (সহীহ বুখারী)। কেনই বা করবেন না, তিনিই তো বলেছেনঃ “নামাযকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলতা”। (মুসনাদে আহমাদ)। আর তাঁর চক্ষুশীতলতা হলো নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাঁর ইবাদাত করা, তাঁর প্রতি একাগ্র ও কায়মনোবাক্য হওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে ফরজ নামাযে ইমামতি করতেন তখন তিনি খুব সংক্ষেপ করতেন, তিনি তাঁর মুক্তাদিদের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রাখতেন, এবং তাদের প্রতি দয়াদ্র হতেন। এই সূত্রে  রাসূলুল্লাহ (সা.) মুক্তাদিদের জন্য নামাযের জামাতকে সহজ করার উপদেশ দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে, তখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা তাঁদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ, বৃদ্ধ ও কর্মব্যস্ত লোকও রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী নামায আদায় করে তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (বুখারী ও মুসলিম)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সময় দীর্ঘ করার নিয়ত করে নামায শুরু করতেন, অতঃপর শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে নামায সংক্ষিপ্ত করে দিতেন। তিনি বলেনঃ আমি নামায পড়তে দাঁড়াই এবং আমার ইচ্ছা হয় তা দীর্ঘ করি। অতঃপর আমি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি। ফলে আমি তার মায়ের কষ্ট হওয়াটা অপছন্দ মনে করে নামায সংক্ষিপ্ত করি। (সহীহ বুখারী)।

- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ব ও পরের গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দেওয়ার পর ও তিনি দীর্ঘক্ষণ সময় নামাযে কাটাতেন, এর তাৎপর্য কী? আমাদের কি করা উচিৎ?।

- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নামাযকে করা হয়েছে আমার চোখের শীতলতা”, আপনি কীভাবে নামাযকে আপনার চক্ষু শীতলকারী বানাবেন?

- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামতি করলে নামায খুব সংক্ষেপ করতেন আর একা পড়লে এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করতেন যে তাঁর পা ফুলে ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ত, এর কারণ কী?।

নামাযে খুশু তথা একাগ্রতা ও ধীরস্থিরতা রক্ষা করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে খুশু তথা গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করতেন, তিনি বিনয়াবনত এবং আপাত-মস্তক দীনতাসহ আল্লাহর সমীপে দন্ডায়মান হতেন এবং তিনি সাহাবীদের তা শিখিয়েছেন, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করতে লাগল, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদের এক কোণে অবস্হান করছিলেন। লোকটি তাঁর কাছে এসে তাঁকে সালাম করল। তিনি বললেনঃ ফিরে যাও এবং নামায আদায় করে নাও। কেননা, তুমি নামায আদায় করনি। তখন সে ফিরে গেল এবং নামায আদায় করল। পুনরায় এসে তাঁকে সালাম করল। তিনি উত্তরে বললেনঃ তোমার উপরও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় করে নাও। কেননা, তুমি নামায আদায় করনি। তৃতীয়বার লোকটি বলল, দয়া করে আমাকে অবহিত করে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাযে দণ্ডায়মান হবে তখন খুব ভালভাবে অযু করে নেবে। এরপর কিবলামুখী হবে। তারপর তাকবীরে তাহরীমা বলবে। এরপর কুরআন মজীদ থেকে যা তোমার জন্য সহজ তিলাওয়াত করবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে। এরপর মাথা উত্তোলন করবে। এমনকি সঠিকভাবে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর সিজদা করবে ধীরস্হিরভাবে। এরপর (সিজদা থেকে) মাথা উত্তোলন করবেঃ এমন কি সোজা হয়ে এবং ধীরস্থিরভাবে বসে যাবে। এরপর পূনরায় সিজদা করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর সিজদা থেকে মাথা উত্তোলন করবে। এমন কি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর তোমার সমস্ত নামাযই এরূপ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের প্রত্যেক রুকনে খুশু তথা একাগ্রতা ও ধীরস্থিরতা রক্ষার হুকুম দিয়েছেন, এবং সেটিকে নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত আখ্যা দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি রুকূ হতে উঠার পর সোজা হয়ে দাঁড়াবে না এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী বিরতির সময় সোজা হয়ে বসবে না তার নামায যথেষ্ট হবে না। (আবূ দাউদ), যে ব্যক্তি তা করে না তাকে চোর বলে আখ্যায়িত করেছেন, তিনি বলেনঃ চোরদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম চোর হল সেই ব্যক্তি যে নামায চুরি করে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নামাযের চুরি কিভাবে হয়? তিনি বললেন, নামাযের চুরি হলো রুকূ‘-সিজদা পূর্ণরূপে না করা। (মুসনাদে আহমাদ)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এমন অনেক লোক আছে যারা নামায পড়ে কিন্তু তাদের নামায পুরাপুরি কবুল না হওয়ায় পরিপূর্ণ সাওয়াব প্রাপ্ত হয় না। বরং তাদের কেউ ১০ ভাগের ১ ভাগ, ৯ ভাগের ১ ভাগ, ৮ ভাগের ১ ভাগ, ৭ ভাগের ১ ভাগ, ৬ ভাগের ১ ভাগ, ৫ ভাগের ১ ভাগ, ৪ ভাগের ১ ভাগ, তিনের-একাংশ বা অর্ধাংশ সাওয়াব প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (আবূ দাউদ - সুনানে নাসাঈ)।

যে লোক তাড়াতাড়ি নামায পড়ল তার নামায কি আদায় হল না? তাহলে কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ভাবে বললেন, যেন সে নামায পড়েই নি?।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতে নামাজ আদায়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, তাঁর উম্মতকে এর নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে তাদেরকে এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ কোনো ব্যক্তির জামাআতের সাথে নামাযের সাওয়াব, তার নিজের ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমরূপে অযু করলো, অতঃপর একমাত্র নামাযের উদ্দেশে মসজিদে রওয়ানা করল তখন তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। নামায আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ নামাযের স্থানে থাকে,ফেরেশতাগণ তার জন্য এ বলে দু‘আ করতে থাকেন - ‘‘হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।’’ আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ নামাযের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযে রত বলে গণ্য হয়। (সহীহ বুখারী)।

তিনি নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় ধীরস্থীরতা ও গাম্ভীর্যতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ যখন তোমরা ইকামত শুনতে পাবে, তখন নামায এর দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত ধীরস্থীরতা ও গাম্ভীর্যতা বজায় রাখা। তাড়াহুড়া করবেনা। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে,আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করে নিবে। (বুখারী ও মুসলিম)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি রুকূ হতে উঠার পর সোজা হয়ে দাঁড়াবে না এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী বিরতীর সময় সোজা হয়ে বসবে না তার নামায যথেষ্ট হবে না। (আবূ দাউদ)।

জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলত এত বেশি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অন্ধ ব্যক্তিকে পর্যন্ত জামাত ছাড়ার অনুমতি দেন নি যখন তিনি এর অনুমতি চেয়েছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি অন্ধ, তদুপরি মসজিদও আমার ঘর হতে অনেক দূরে,যদিও আমার একজন পথচালক আছে কিন্তু সে আমার জন্য উপযোগি নয়। এমতাবস্থায় আমি কি ঘরে (ফরয) নামায আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কি আযান শুনতে পাও? আমি বলি, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাহলে আমি তোমার জন্য (জামাআত) থেকে অব্যাহতির কোন কারণ পাচ্ছি না। (আবূ দাউদ - ইবনে মাজাহ)।

জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব এত বেশি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, নামায কায়েম করার আদেশ করব, অতঃপর নামায দাঁড়িয়ে গেলে যারা নামাযে উপস্থিত হয়না আমি তাদের বাড়ী গিয়ে সে সব লোকসহ তাদের ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই। (বুখারী ও মুসলিম)।

হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক ব্যাক্তিকে দেখলেন যে, সে রুকূ’ ও সিজদা ঠিকমত আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেন, তোমার নামায হয়নি, যদি তুমি (এই অবস্থায়) মারা যাও, তাহলে আল্লাহ্ কর্তৃক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদত্ত আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তুমি মারা যাবে। (সহীহ বুখারী)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পরিপূর্ণ আদায় না হওয়ার ব্যাপারে, নামাযে খুশু তথা গভীর মনোযোগ, একাগ্রতা ও ধীরস্থিরতা রক্ষা না করার ব্যাপারে, নামায না পড়া এবং জামাতের সাথে নামায আদায় না করার ব্যাপারে তাঁর উম্মতকে খুব সতর্ক করেছেন। কীভাবে একজন মুসলিম তার রব এর সাথে যোগাযোগ করা, তাঁর কাছে দুআ করা, তাঁর কাছে বিনয়াবনত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন এবং নামায পরিত্যাগকারীকে হুঁশিয়ার করেছেন, তিনি বলেনঃ (মুনাফিকদের জান-মাল রক্ষার জন্য) তাদের ও আমাদের মাঝে চুক্তির শর্ত হল নামায। যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করল সে কুফরী করল। (মুসনাদে আহমাদ)।

আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরবৃন্দ নামায ছাড়া অন্য কোনো আমল ত্যাগ করাকে কুফরীমূলক কাজ বলে মনে করতেন না। (তিরমিযী)।

আমরা কীভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে অনুসরণ করব?

১- বেশি বেশি নামায ও সিজদার এহতেমাম করুন, এবং এর উপর অটল থাকুন। নামাজ ও সিজদার মাধ্যমে মহামহিম, দয়ালু আল্লাহ তা’আলার সাথে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং এর দ্বারা হৃদয়কে তৃপ্তি ও প্রশান্তির স্বাদে অবগাহন করান।

২- নামাজ বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার সেতুবন্ধন, নামাজে বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ তা’আলার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন, তাহলে আপনিও আল্লাহ তা‘আলার রহমত এবং মাগফিরাতের ফযল প্রাপ্ত হবেন।

৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পদ্ধতিতে নামায আদায় করেছেন সে পদ্ধতি শিখে নিন, তিনি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর মতো নামায আদায় করার জন্য, তিনি বলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছ সেভাবে নামায আদায় করবে। (বুখারী ও মুসলিম)।

৪- যখন নামাযে দাঁড়াবেন তখন অত্যন্ত বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা, ও নিষ্ঠা সহকারে আল্লাহর সমীপে দন্ডায়মান হবেন, নামাযে দুনিয়া ও এর সকল পেরেশানী এবং জটিলতাকে সম্পূর্ণরূপে আপনার পশ্চাতে ফেলে শুধু পরম দয়ালু আল্লাহ তা‘আলার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতি আবিষ্ট হবেন। ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করুন, আয়াত ও তদীয় রুকু ইত্যাদির শুরু ও শেষের প্রতি মনোযোগী হয়ে তিলাওয়াতের সময় এর মর্ম নিয়ে চিন্তা করুন যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন।

 ৫- একাকী নামায আদায় করলে দীর্ঘ করে একাগ্রতা ও রোনাজারীর সাথে নামায আদায়ের চেষ্টা করুন। আর যদি মুসল্লিদের ইমামতি করেন তাহলে নামায সংক্ষেপ করুন যাতে তাদের কষ্ট না হয়, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।

৬- আপনার জীবনসঙ্গী ও সন্তানদেরকে নামায পড়া ও এর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আদেশ দিন। বাড়িতে নফল ও সুন্নাত নামাযসমূহ আদায়ের মাধ্যমে আপনার ঘরের জন্যও নামাযের কিছুটা অংশ বরাদ্দ করুন যেমনটি করেছেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

৭- প্রথম কাতারে নামায আদায় করার চেষ্টা করুন, এটা অনেক ফযীলতপূর্ণ যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে শিখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফযীলত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, অতঃপর লটারীর মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা সম্ভব না হত,তাহলে অবশ্যই তারা লটারীরও আশ্রয় নিত এই সুযোগ পেতে।  (সহীহ বুখারী)।

৮- নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে দেরি না করে নামায আদায় করে নিবেন, নামাযে বিলম্ব করা থেকে খুব সাবধান, কেননা কিয়ামতের দিন প্রথম যে বিষয়টির জন্য আপনার জবাবদিহি করতে হবে তা হলো নামায। যদি আপনার নামায ঠিক হয়ে যায় আপনার বাকী সব কাজও ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।